জামালপুরে সাবেক সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ সহ ৫৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
জামালপুরের বকশীগঞ্জে গত বছরের জুলাই মাসে গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র জনতার মিছিলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য নুর মোহাম্মদসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের বকশীগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক শাহরিয়ার আহমেদ সুমন গত ২০ নভেম্বর এ মামলা দায়ের করেন। পরে বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ মামলাটি রুজু করে।
থানা সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাই বিকেলে ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ছাত্র জনতা বকশীগঞ্জ পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি মালিবাগ মোড়ে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ দলের নেতাকর্মীরা বাধা দেয় এবং ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একই দিন ‘বিসমিল্লাহ হোটেল’-এ অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
পরদিনও সরকার পতনের দাবিতে ছাত্র জনতা বিক্ষোভে নামলে নামীয় আসামিদের নেতৃত্বে আরও ২–৩ শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তি মিছিলে হামলা চালায়। এতে বিক্ষোভ মিছিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় এবং মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। বাদীপক্ষের দাবি, ঘটনার পর গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়।
মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের মধ্যে রয়েছেন—বকশীগঞ্জ–দেওয়ানগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম সাত্তার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীনা বেগম, সহসভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জুমান তালুকদার, জহুরা বেগম, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য শিলা সারোয়ার, বাট্টাজোড় ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল তালুকদার, সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, ধানুয়া কামালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি, মেরুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিকসহ ৫৯ জন আসামি এবং আরও ২০০–৩০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৭ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়ায় এবং এলাকায় ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে। পরে তারা বিসমিল্লাহ হোটেলে প্রবেশ করে অগ্নিসংযোগ করে। এতে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।
তবে স্থানীয়দের দাবি, ওইদিন বকশীগঞ্জে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তাদের ভাষ্য, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামী লীগ অফিসে আগুন ধরিয়ে দিলে সেই আগুন পাশের বিসমিল্লাহ হোটেলে ছড়িয়ে পড়ে এবং হোটেলটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তাই মামলার অভিযোগ বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
মামলার নামীয় আসামিরা অভিযোগ করে বলেছেন, ঘটনার প্রায় ১৬ মাস পর দায়ের করা এই মামলা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্বপরিকল্পিত। তাদের দাবি, নির্দিষ্ট একটি শ্রেণিকে টার্গেট করে ‘মামলা বানিজ্যের’ অংশ হিসেবে এ মামলা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাদী শাহরিয়ার সুমন দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় ব্যক্তিগত প্রভাব বিস্তারের নামে উত্তেজনা সৃষ্টি করছেন এবং মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আর্থিক চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
বকশীগঞ্জ থানার ওসি খন্দকার শাকের আহমেদ জানান, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।










